
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া রেলগেট থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত পাকা সরু সড়কের মাঝামাঝি ওহাব মেলেটারি বাড়িসংলগ্ন ছোট ব্রিজটি এখন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মান্ধাতা আমলে নির্মিত বেহালদশার এ ব্রিজটি দীর্ঘদিনেও কোনোরকম সংস্কার ও মেরামত না করায় বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে একপাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে। অপর পাশের রেলিংটিও নড়বড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। সেটিও যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ ছাড়া ব্রিজটির দু’পাশের আনুমানিক এক হাজার ফুট সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দে ভরে গেছে।
আজ বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজটি দিয়ে সরু সড়কে চলাচলের সময় প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রিজটিতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত পথচারী, মোটরসাইকেল আরোহী, রিকশাভ্যান ব্রিজটির ওপর দিয়ে চলাচল করার সময় সৃষ্ট খাদে হোঁচট খেয়ে ও গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ব্রিজটি ও সড়কটি একেবারে ছোট হওয়ায় একসঙ্গে চলাচলকারী রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক মুখোমুখি কিংবা পেছন থেকে পাশ কাটানো বড়ই দুষ্কর হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, এই এলাকার মানুষজনের চলাচলের একমাত্র ভরসা জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ব্রিজ ও সরু সড়কটি দিয়ে দিনরাত হাজার হাজার পথচারী ছাড়াও শত শত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, অটোভ্যান, মোটরসাইকেল আরোহীরা প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
বর্তমানে ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে রড-সিমেন্ট ধসে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হওয়ায় সর্বসাধারনের চলাচল একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ভগ্নদশার ব্রিজটির ওপর দিয়ে কলেজগামী শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের সময় তারা ভয়ে কাঁপতে থাকেন। মাঝেমধ্যে ব্রিজটির রড সিমেন্ট ধসে খাদের সৃষ্টি হয়। এ সময় পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বরগণ তাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে জনসাধারণের সাময়িক চলাচলের জন্য সিমেন্ট-বালু মিশিয়ে কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে খাদগুলো মেরামত করে দেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা আলম মিয়া ও আব্দুর রহিম বলেন, এই ব্রিজটা নিয়ে আমরা আশপাশের লোকজন খুব ভয়ে থাকি। কারণ নাজুক দশার ব্রিজটি ওপর দিয়ে সবসময় মানুষজন, যাত্রীবাহী ও মালবাহী বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এতে কখন জানি কি ঘটে এমন ভয়ে থাকি। তারা আরো বলেন, রাতে কিংবা দিনে কোনো সময় জোরে শব্দ হলে আমরা আঁতকে উঠি যে ব্রিজে কোনো কিছু ঘটলো নাকি। মার্কেটিং কোম্পানির আনোয়ার হোসেন নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, আমি প্রায় সময়ই এই সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করি। এরই মধ্যে হঠাৎ ব্রিজের খাদে আমার চলন্ত মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। এতে আমার হাত-পা রক্তাত্ত জখম হয়। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আমাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। বর্তমান সরকার জনসাধারণের সুবিধার্থে বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও ব্রিজের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেই ব্রিজটির কাজ দ্রুত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অটোচালক এনামুল হক বলেন, ভাঙাচুরা সড়ক আর ব্রিজটি দিয়ে পার হওয়ার সময় গাড়ির হেলদোলে অনেক যাত্রী দুর্ঘটনার ভয়ে কাঁপাকাঁপি করতে থাকেন। শুধু তাই নয় বেহাল দশার সড়ক এবং ব্রিজটি দিয়ে রিকশাভ্যান, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র ঝাঁকুনিতে রোগীর অবস্থা যেন আরো কাহিল হয়ে পড়ে।
এমতবস্থায় ভাঙাচুরা এ সড়ক ও ব্রিজটি দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ঘটনা যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই সর্বসাধারণের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে চলাচলের নিমিত্তে অনুপযোগী ব্রিজটি ও সরু এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও প্রশস্তকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে স্থানীয় সচেতন মনে করছেন।
কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এআরএম মাহাফুজার রহমান বলেন, এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ব্রিজটি দেখে ছবি ও ভিডিও করে নিয়েছেন। আমি আশাবাদী খুব শিগগিরই ব্রিজটির কাজ শুরু হবে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওছার হাবিব বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তারপরও খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকালের খবর/ওআর