
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর বাজারের মুদি দোকানগুলোতে নিত্যপণ্যের মূল্যে সামঞ্জস্য নেই। নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে গিয়ে অসহায় অবস্থায় ক্রেতারা। বিশেষ করে কেটেখাওয়া মানুষের নাভিশ্বাসের উপক্রম।
জগন্নাথপুর পৌরশহরের ৬নং ওয়ার্ড বাসিন্দা বাবুল দাস জানান, গত রবিবার বাজার করতে গিয়ে জগন্নাথপুর বাজারের টিএন্ডটি রোডের বাউধরন স্টোর থেকে ৪৫ টাকা দরে এক কেজি আলু ক্রয় করি। এমতাবস্থায় আমরা হতাশ। জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী আজমল হোসেন জানান, জগন্নাথপুর বাজারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে গিয়ে দোকানে দোকানে পণ্যের দামে মিল না থাকায় বিব্রত বোধ করি। তাই হতাশ হয়ে যেকোনো একটি মুদি দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য।
পৌরশহরের প্রধান বাজার জগন্নাথপুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে পেঁয়াজ, আলুর দাম বেড়েছে। দোকানে দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে মিল না থাকলে যাচাই বাচাই না করে বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে পণ্য ক্রয় করছেন ক্রেতারা। কারণ কোনো দোকানে এক পণ্যের দাম বেশি থাকলে অন্য দোকানে কম। আবার সেই দোকানে অন্য পণ্যের দাম বেশি। বাজার নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় নাজেহাল সাধারণ মানুষ। তবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের মান অনুযায়ী দাম কম-বেশি থাকে। এছাড়াও তারা জানান, দাম ওঠা-নামা থাকায় আটকে যাওয়া পণ্যের মূল্য একটু বেশি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
জগন্নাথপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক হালি লাল মুরগির মুরগির ডিম ৫৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতিপিস ডিম ক্রেতাকে ক্রয় করতে হচ্ছে ১৪ টাকায়। এই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দামে সামঞ্জস্য নেই। পাইকারি দোকানের পার্শ¦বর্তী খুচরা দোকানগুলোতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে ও পাইকারি দোকানগুলোতে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।
দোকানগুলোতে নিত্যপণ্য পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারী দোকান বাউধরন ভেরাইটিজ স্টোরে প্রতিকেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা ও প্রতিলিটার পিওর সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা হলে মহাদেব ট্রেডার্সে প্রতিকেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৫৭-৬০ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, পিওর সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, লাভলী স্টোরে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৫৮ টাকা, আলু ৪৩ টাকা ও পিওর সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে খুচরা দোকান মেসার্স তাওহিদা স্টোরে পিওর সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া জগন্নাথপুর বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যে অসামঞ্জস্য লক্ষ্যণীয়। বিভিন্ন দোকানে পামওয়েল প্রতিলিটার ১৪৫-১৬০ টাকা, প্রতিকেজি রসুন ১৭০-২০০ টাকা, চিনির কেজি ১৬০ টাকা, শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত, চায়না আদা প্রতিকেজি ১৭০-২২০ টাকা পর্যন্ত, ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৬০-১৭০ টাকা। দোকানগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকলেও একমাত্র চায়না মিডিয়াম ডালে সামঞ্জস্য রয়েছে। চায়না মিডিয়াম ডাল প্রতিকেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জগন্নাথপুর বাজারের মহাদেব ট্রেডার্সের পরিচালক অসিত দাশ জানান, কোয়ালিটি অনুযায়ী নিত্যপণ্যের দাম কম- বেশি থাকতে পারে। তাই যে দোকানে পণ্য ভালো সে দোকানে রেট ও একটু বেশি হবে; আর এটা স্বাভাবিক। মেসার্স তাওহিদা স্টােরের ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেন জানান, ক্রয় অনুযায়ী আমরা নিত্যপণ্যে সীমিত লাভ ধরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি।
অভি এন্ড তাওসান ভেরাইটিজ স্টোরের পরিচালক সাজ্জাদ মিয়া বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য ওঠানামা থাকায় কিছু পণ্য আটকে গেলে দোকানিরা পূর্বের রেটে বিক্রি করতে বাধ্য। নতুবা ব্যবসায় লোকসান গুনতে হবে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয় সুনামগঞ্জের সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, আমাদের জনবল কম থাকার পরও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান চলছে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জগন্নাথপুরে ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। আগামীতে ও অভিযান চলবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
আজকালের খবর/ওআর