আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, তার অধিকাংশই বিকল। অতি নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রবাসীদের অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া এ প্রকল্প। এতে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র ফারুকুল হক নির্বাচিত হওয়ার পর বিয়ানীবাজারের প্রবাসীরা পৌরশহরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের বড় উদ্যোগ নেন। তারা প্রবাস থেকে টাকা পাঠিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় বলে জানা গেছে। বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়নকালে ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। বর্তমানে অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আমরা নষ্ট হওয়া ক্যামেরাগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ঝড়, বৃষ্টি, বিদ্যুতের খুঁটি বদলসহ নানা কারণে তারগুলো ছিঁড়ে যায়। সেগুলো সঠিক সময়ে মেরামত করে সচল রাখা সম্ভব হয়নি। যার ফলে ক্যামেরার সংখ্যা হ্রাস পায়।
বর্তমানে পৌরশহর এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার মূল কার্যক্রম না থাকলেও, সেগুলো শুধুই লোক দেখানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেয়ালে বা বিভিন্ন বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা আছে। তবে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করার মনিটর বা যন্ত্রপাতি নেই। আবার অনেক এলাকায় রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরা মাসের পর মাস নষ্ট থাকলেও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও স্থান। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয় বিয়ানীবাজার পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কিছুটা হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয় সাধারণ মানুষের। হ্রাস পেতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করে পৌর এলাকায়। মানুষের চলাচল নিরাপদ হয়ে ওঠে। রাতের শহরও নিরাপদ ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার কারণে সুফল পেতে থাকেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সদস্য আবুল হাসান জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থাকা নষ্ট সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এরপর আর সেটি লাগানো হয়নি। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মেরামত করা সম্ভব হলে ক্যামেরাগুলো দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু, এক বছর পর নষ্ট হতে থাকে ক্যামেরাগুলো।
সূত্র জানায়, ক্যামরা স্থাপন প্রকল্পের ঠিকাদার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তার মনোনীত একজন ব্যক্তি নষ্ট ক্যামেরা মেরামতের জন্য থাকলেও তাতে কাজ হচ্ছেনা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পৌর কার্যালয়ে লাগানো মনিটর নিয়মিত দেখভাল করা হয়। এজন্য একজন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিও রয়েছেন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবদুলাল ধর বলেন, বর্তমানে অপরাধীরা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। এছাড়া তাদের নিজস্ব সোর্স আছে। তারা কোন কোন এলাকায় সিসি ক্যামেরার কার্যক্রম আছে, কোন কোন এলাকায় নেই, তা জেনেই ওইসব এলাকায় অপরাধ করছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো মেরামতের অনুরোধ জানান।
আজকালের খবর/ওআর