বুধবার ১ মে ২০২৪
রইলো তোমার নিমন্ত্রণ
আশরাফ উদ্দীন আহমদ
প্রকাশ: শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩:১৪ PM
ঝুমঝুমপুর বুড়ো বটতলা থেকে নাক বরাবর নড়াইলের দিকে যে মহাসড়ক চলে গেছে। তার ঠিক ডানদিকের ইট ফেলা ভাঙা এবড়ো-থেবড়ো সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে মমিন। বিজিবি’র ক্যাম্পটাকে ডান পাঁজরে রেখে পায়ে-পায়ে একসময় সানমুন লন্ডির সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। পেন্ডুলামের মতো মাথাটা কেমন জানি পাক দিচ্ছে তার এখন। দীর্ঘসময় এই যাত্রা অর্থাৎ নাস্তানাবুদ হওয়া ধকলের জের তাবৎ শরীরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। নাচেৎ বরাবরই ক্লান্তিহীন একজন কর্মক্ষম মানুষ সে। এবং সেজন্য যথেষ্ট সুখ্যাতিও রয়েছে সর্বত্র। বুকের ভেতরটা কেমন একটা ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের রগচটা রোদের আঁচে ঘামার্ত শরীর কেমন পিচ্ছিল আর আঠালো হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। নিজের কাছের নিজেকেই বড় বিশ্রী আর কদাকার লাগে।
মমিন একসময় বামপাশের চায়ের স্টলের ভাঙা চেয়ার খানায় বসে। তারপর পরপর দু’গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিঃশেষ করে, চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেয়। চোখে-মুখে কেমন এক তৃপ্তির রেখা সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে। জায়গাটা বড় বেশি নিরিবিলি শুধু ওপাশের কাঠ ফাঁড়ায়ের মিলগুলো রাস্তার দু’ধারে অবস্থান করে, সারাদিনমান ঘ্যাঁসর-ঘ্যাঁসর আওয়াজে মুখরিত করেছে। সকালের পরে দুপুরের  খাড়া রোদ মাথার সন্নিকটে দানবের মতো হাসছে যেন বা। আরো সামনে চোখ যেতেই দক্ষিণ দিকে একটা মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসা ধরা পড়ে। মাদ্রাসা থেকে আরেকটু কাঁচা রাস্তায় নেমে গেলেই সেই তামাটে রঙের পুরানো জরাজীর্ণ বাড়িখানা। মাদরাসার প্যালেস্তারাহীন প্রাচীরের ওপর একদঙ্গল ছাই রঙ্গা কাক কা-কা স্বরে মুখরিত করে তুলেছে এলাকাটাকে। সম্ভবত মাদ্রাসায় খাশি জবাই হয়েছে আর সে ছাঁট-ছুট বা ফেলে দেওয়া অংশ ভক্ষণ করার জন্য জুটেছে রাজ্যের যতো কাক সম্প্রদায়।
একসময় বাড়িটার ভেতর প্রবেশ করে হতচকিয়ে যায়। সাবেকি আমলের বাড়ি হলেও এখনো কেমন ঝরঝরে আর অমলিন। সিঁড়ির ওপর উঠে একেবারে লম্বা টানা বারান্দা ধরে হাঁটতে থাকে নাক বরাবর। বড়ই নিরিবিলি আর শান্ত। কেউ থাকে বলে মনে হয় না, এলাকাটা যেমন নির্জন তেমনি বাড়িখানাও কেমন যেন ভূতড়ে। বুকের ভেতরে ভয় এসে আস্তানা গাড়ে।
অকস্মাৎ একটা ঘরের দরোজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ‘থ’ বনে যায়। বেশ গোছগাছ আর  পরিপাটি ঘরখানা। এইমাত্র কেউ যেন সাঁজগোছ করে রেখে পাশের ঘরে গেছে মনে হলো। মমিন বড় বেশি সাহসি, চুয়াল্লিশ ইঞ্চি বুকে খুব সাহস। সহজে ভড়কে যায় না কখনো। কচ্ছপ বা শামুক দেখে যারা ভয় পায় তাদের পুরুষ অথবা নারী ভাবতেই ওর ভারী কষ্ট হয়। সেখানে জনমানবহীন বাড়িটার ভেতর এসে সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয় সে। বুক টানটান করে মেরুদণ্ড উঁচু রেখে চারদিকে চোখ ফেলে দেখে নেয় অবস্থান। কোনোক্রমে ভড়কে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে না সে। সঠিক জায়গায় এসেছে সে, অনেকদিনের পুরনো হলেও একটা সময় এখানে একনাগারে কতোদিন থেকেছে ভুলে যাওয়ার তো নয়। বাড়িটার যেমন পরিচয়, সে’ রকমই আছে, কোথাও এতোটুকু ভুল হওয়ার নয়।  বাড়িটা সেই সাবেক আমলের বাড়ির মতোই আছে। কড়িবর্গা আর তীরগুলো অনেক পুরনো হলেও বেশ মজবুত এখনো। প্যালেস্তারা খসে গেলেও বা মেঝের শাইনে ছোট-বড় অনেক ফাটল বর্তমান, তারপরও জমিদারী একটা গৌরব জানান দিচ্ছে যেন। ঝুমঝুমপুর বুড়ো বটতলা থেকে বাড়ির অস্তিত্ব তেমনভাবে টের না পেলেও একটা সাবেককালের ভুতুড়ে বাড়ি যে আছে তা অনুমান করা সম্ভব। বাড়ির মালিক দেশান্তর হয়েছে অনেক আগেই, এখন বাড়িতে সাতভূতে বাস করে অর্থাৎ মমিনের দূরসম্পর্কের একচাচা। যে কি না ছাপান্নের দাঙ্গায় ওপার থেকে এখানে আসে। তার স্ত্রীও গত হয়েছেন, যদিও তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। এখন একেবারে নিঃসঙ্গ, বেচারা পক্ষঘাতগ্রস্ত, বিছানায় শয্যাগত। মমিন সংবাদ পেয়েছে, মানুষটা সত্যিই এখন অনেক অসহায়। একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেই মুক্তিযোদ্ধার জীবন এখন বড় কঠিন। দেখভাল করার জন্য যে একজন মানুষ ছিলো, সেও নাকি দেশের বাড়ি গিয়ে আর ফিরে আসেনি। মমিন একসময় নিদিষ্ট রুমে আসে, বড়ই করুণ দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে ওঠে। কী বলতে হয় বুঝতে পারে না, এ সময় কী বলে মানুষের সামনে দাঁড়াতে হয়। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে কখনো পড়েনি বলে হয়তো আপদমস্তক নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়।
আচমকা মানুষটা আধো-আধো বোলে কথা বলে, তুমি কে, আমার তো আপন কেউ নেই...
কথা শুনে বোঝা যায় মানুষটার স্টোক হয়েছে একবার কি একাধিকবার, কথা এড়িয়ে যাচ্ছে, মুখ বেঁকে গেছে, জড়িয়ে-জড়িয়ে কি যেন বলতে চায় কিন্তু শ্লেস্মার রেশ প্রকট। খোলাখুলিভাবে কোনো ভূমিকা না করে মমিন নিজের পরিচয় দিলে, মানুষটির ঠোঁটে একচিলতে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। তারপর কাছে ডাকে, ভাঙা-ভাঙা স্বরে বলে, তোমার বাবা ছিলো আমার একটু দূরসম্পর্কের ফুপাতো ভাই...
মমিন জানে এ চাচার আশ্রয়ে একদিন তারা জীবন কাটিয়েছে। যুদ্ধের দামামা বাজলে সাতগুষ্টি এখানে এই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বাড়িটা বড় জড়জীর্ণ কংকালসার বলে বাইরের লোকে বা মিলিটারিরা এখানে ঘাঁটি বাঁধতেও সাহস পায়নি কখনো। সে সমস্ত দিনের ছবিগুলো চোখের পদ্যায় ভেসে আছে আজো।  কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা এই চাচা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। কমলিনীকে নিয়ে সেবার তো পালিয়ে এসেছিলো এই চাচার কাছে। বাড়ির লোক আত্মীয়-স্বজন যখন দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো, অন্য ধর্মের মেয়ে বলেই নয় বরং কমলিনীরা ছিলো ছোটজাতের শ্যামলা রঙের মেয়ে। পছন্দ করেনি স্বয়ং মমিনের বাবা-মা, তখন এই চাচা বিধি মতো এভিডেফিট করে বিয়ে দিয়ে পাক্কা ছয় মাস রেখেছিলেন নিখরচায়। আজ সবই স্মরণ হয়ে যাচ্ছে, অথচ এতোকাল কিভাবে ভুলে ছিলো। এমনো পরো-উপকারী মানুষকে ভুলে থাকা যায়। যায় না বলেই মমিন এসেছে দেখতে অথবা কিছু ঋণ শোধ করতে। কারো ঋণ কি সারাজীবনে কখনো পরিশোধ হয়। হয়তো হয় কিংবা হয় না। জন্মদাগের মতো শরীরে-জীবনে রয়ে যায় সেটে। সেটেই থাকে তার স্মৃতি চিহৃ। অনাকাক্সিক্ষত সেই স্মৃতিচিহৃ নিয়ে মমিন বসে আছে মুখোমুখি। আবার কথা বলে ওঠে, ফুপাতো ভাই, ঠিক আপন ফুপু নয়, দূরসম্পর্কের ফুপুর ছেলে, কতোদিন দেখেনি...
কী বলা যায়, কথা থেমে যায়, কতোদিন ধরে তিনি এভাবে শুয়ে আছে বিছানায় বোঝা যায় না। মমিনের হাত দুটো ধরে আছে, আপনাকে কে দেখাশুনা করেন?
এক চিলতে হেসে বলে ওঠে, আছে সে এক হতভাগ্য বিধবা, আমাকে খুব ভালোবাসে, মা যেভাবে সন্তানকে ভালোবাসে...
—কে তিনি কে—
—রক্তের সম্পর্ক থাকলেই কি আপন হয় রে! রক্তের সম্পর্কের বাইরেও তো মানুষ মানুষকে নিয়ে বাঁচে, নয় কি?
—তা তো অবশ্যই, পরীক্ষিত সত্য...
—মেয়েটি আমাকে বাবা বলে, ওরও তিন কুলে কেউ নেই, হিন্দু ঘরের মেয়ে, বিধবা হলে কেউ তো দেখে না, সবাই দূর-দূর করে।
—দেখতে পাচ্ছি না তো, কোথায় তিনি!
—আছে, হয়তো মন্দিরে গেছে, দিনরাত্রি ভক্তি ভরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা আর আমার খেদমত...
—কাজটা তো আমাদেরই করা উচিৎ ছিলো...
চাচা যেন কথাটা শুনেও না শোনার ভান করলেন। কিছু সময় পার করে বলে ওঠেন, মানুষ এতোটাই ব্যস্ত, কাকে দোষ দেবো, সময়ের এখন অনেক মূল্য, কার সময়...
—কিন্তু চাচা, আপনি আমাদের ঋণ করে রেখেছেন কতোভাবে, তা কি কোনোদিন শোধ হবে...
—সব ঋণ শোধ হতেই হবে এমন তো কথা নেই, তা তুমি বুঝি শোধ দিতে এসেছো?
—না না তা বলছি নে, মানুষ তো ছোট-ছোট ঋণ শোধ করতে পারে, বড় ঋণগুলোর জন্য চিরজীবন চিরঋণী থেকেই যায়!
—বেশ তো কথা শিখেছো বাবা, তা এখন কি করো...
—আছি কাগজে সাংবাদিকতা নিয়েই।
—বাহ্ বেশ তা আমার সংবাদ পেলে।
—মনের টানে এসেছি চাচা, মা নেই, আব্বাও চলে গেছেন, আমি বড় একা...
—তোমার আব্বা-আম্মা চলে গেছে, মাহতাব ভাই তো আমার বেশি দিনের বড় ছিলেন না, তা ধরো বছরের তিনেকের হবে, আমি শুধু রয়ে গেলাম, বেঁচে থাকা মানে তো কষ্ট, মানুষকে একটা সময় পরে  চলে যেতে হয়, যতো তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততোই ভালো, মান-সম্মান নিয়ে...
—আপনার কথা ভুলেনি চাচা...
—বউমা কেমন আছে, পরে তো তোমার আব্বা-আম্মা মেনে নিয়েছিলোÑ
—হ্যাঁ তা একরকম বাধ্য হয়েই মানে...
—কিন্তু বউমা খুব ভালো মেয়ে বাবা। জাত-ধর্মের চেয়ে মানুষের ভেতরের মানুষকে মানুষ দেখে না। বউমাকে দেখে বুঝেছি, ভালো মেয়ে...
—আপনার কথা প্রায় বলে, একটা স্কুলে চাকুরি করে আবার, বেশ সংসারি...আমাদের দু’ ছেলে-মেয়ে।
—আমার মৃত্যুর আগে একবার দেখিয়ে নিয়ে যেও।
—না চাচা আপনি আরো অনেকদিন বাঁচবেন।
—বেঁচে আর কী হবে বাবা, বাঁচা মানে তো বিড়ম্বনা-কষ্ট আর যন্ত্রণা, ভালো লাগে না।
কাকতালীয়ভাবে ঘরে একটা নারী প্রতিমাকে দেখে মমিন কেমন ভড়কে যায়। ঘাড়ে একটা পাতলা চাদর, সিঁদুর-শাঁখা-পলাহীন একটা বাইশ-তেইশ বছরের দোহারা চেহারার মেয়ে। চোখ দুটো বড়ই উজ্জ্বল, মনে হলো এখনই নদী থেকে ডুব দিয়ে ভেসে এসেছে। বড়ই পবিত্র বদনখানি, এতো মায়া ছড়িয়ে আছে মুখশ্রী জুড়ে। মমিন পলকহীন তাকিয়ে থাকে অনেকটা সময়। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে কখনো আশা করেনি। মন্থর পায়ে মেয়েটি ঘরের একেবারে ভেতরে আসে, তারপর চাচার খাটের কাছে দাঁড়িয়ে খুব শান্তভাবে বলে, কিছু কি দিতে হবে বাবা...
—না মা কিছুই লাগবে না।
—তাহলে আমি...
—এই দেখো মা আমার ভাতিজা, ঢাকায় থাকে, পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে, এর কতো গল্প তোমাকে করেছি, মনে নেই, তোমরা পরিচিত হও...
মমিন আগবাড়িয়ে বলে ওঠে তৎক্ষণাৎ, আপনার কথা চাচা এতোক্ষণ বলছিলেন, আপনি না থাকলে তো!
—আমি আর তেমন সময় কোথায় পাই বলুন, কাজের মানুষটি দেশে গেছে কিনা...
—আপনি কি চাকরি করেন?
—ওমা গো চাকরি না করলে খাবো কী, আমাদের মা-ব্যাটাকে কে খাওয়াবে বলুন তো!
—মা-ব্যাটা, মানে আপনার ছেলে আছে।
মেয়েটি মুহূর্তে হাসতে থাকে। মেয়েদের হাসি সচরাচর সুন্দর হয়, কিন্তু এই হঠাৎ পরিচিত মেয়েটির হাসি যেন সব হাসিকে হার মানিয়ে দেয়। হাসির মধ্যে মুক্তোর দানা ছড়িয়ে দেয়, এতো মুক্তো আমি কোথায় রাখি। ওমন হাসি যার তার মনটি অনাবিল-পবিত্র কিন্তু কষ্ট লাগে মেয়েটির স্বামীটি হারিয়ে গেছে। প্রকৃতির কঠিন লীলা বোঝা বড় দায়। হাসতে-হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগার, তারপরও হাসি যেন থামে না। বয়সটা এখনো বেশ কাঁচা, উঠতি বয়সি একটা মেয়ের মন তো ওমন পরিপাটি থাকবেই। চোখে-মুখের দীপ্তি আরো খানিক প্রকাশিত হয়। উজ্জ্বল বর্ণটা ফেটে বের হতে চায়। অতি সরলতা ফুটে ওঠে চিবুক-ওষ্ঠে, তারপর চাচাকে সাক্ষী করে বলে, দেখো বাবা তোমার ভাতিজার কথার ছিরি। কেমন ধারা মানুষ, আমার ছেলে আছে কিনা জানতে চায়...
চাচা যেন বিছানায় শুয়েই মুখে একটু হাসি এনে কী কী বোঝাতে চাইলেন। চাচাকে বেশ সুস্থ মনে হলো, বড় ভালো লাগলো মমিনের। কতোদিন চাচার হাসি-খুশি ভরা মুখ দেখেনি। আবার মেয়েটি বললো, বাবা বলো, তোমার ভাতিজাকে আমার ছেলে কোথা?
চাচা ঈষাৎ হেসে বলে ওঠেন, মা-ছেলের কথা কি সবাই বোঝে রে পাগলি...
মমিন নিজের মধ্যে সিধিঁয়ে গেলো খানিক, মনে-মনে লজ্জা পেলো, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় মুহূর্তে, তা কি করা হয়...
—মিডওয়াইফ পাশ করে একটা বেসরকারি হাসপাতালে আছি। যা দেয়, তা দিয়েই দু’ মা-ব্যাটার দিব্যি চলে যায়...
মমিনের কথা যেন হারিয়ে যায় তারপর। বৃষ্টির মতো মিষ্টি একটা শব্দে আবিষ্ট হয় মন। মানুষের ভিড়ে মানুষকে চেনা বড় কঠিন। চেতনাহীন ধূসর এক জগতে মমিন প্রবেশ করেছে। সেখানে এখন অনেক অন্ধকার থাকলেও মেয়েটি উজ্জ্বল আলোয় কেমন শীতল এক জ্যোৎস্না যেন বিতরণ করছে। তারপরও মমিন নিজেকে ঠিক সঠিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারছে না।
সত্যিই মেয়েটির জন্য মমিনের ভারী কষ্ট হয়। এমন একটা মিষ্টি মেয়ে আজ বিধবার বেশে তার সমুখে দন্ডায়মান, ওপরওয়ালার বিচিত্র খেয়াল কাকে কোন্ অবস্থায় রাখবে। সেটা তারই একান্ত মর্জি, বুকের মধ্যে কষ্টের মেঘ জমা হয়।  কষ্ট কি শুধু চাচার জন্য, কষ্ট তো মেয়েটির জন্যও শুরু হলো। চাচাকে এ অবস্থান থেকে নিয়ে যাওয়া নৈতিক কর্তব্য হলেও মমিন বড় অসহায়। কমলিনী চাকরি করে, বাচ্চাগুলোও ছোট নেহাৎই। চাচাকে বাড়ি নিয়ে গেলে কে এমন মানবিক সেরা করবে। কার হেল্লায় দেওয়া যাবে। আব্বা-আম্মা বেঁচে থাকলেও না হয় একটা কথা ছিলো। কোনোভাবেই কোনো কিছুই সম্ভব নয়, সমস্ত সম্ভাবনার দরোজা বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় চাচাকে ফেলে রেখে যেতে হয়, যতোই পাষবিক হোক না কেন, বাস্তব সত্যিই কঠিন। ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যির বাইরে সব, নিজের আকাক্সক্ষার কোনো মূল্য নেই এ সমাজে। আর ভালোবাসা-মানবতা-নৈতিকতা মূল্যবোধ সবই আজ বই-পুস্তকে বন্ধি হয়ে হাহাকার করছে। বাইরে বের হওয়ার কোনো অভিলাশ নেই।
একসময় চাচার কাছ থেকে বিদায় নেয় মমিন। বালিশের পাশে কিছু টাকা গুঁজে রেখে দেয়, হয়তো এটুক  কর্তব্য সারতেই ঢাকা থেকে এতোদূর আসা। চাচা একটু হাসি টেনে কিছু একটা বলতে গিয়েও যেন থেমে গেলেন। বলার অনেক আছে, কিন্তু সময় তাকে বধির করে রেখেছে, কিছুই বলতে পারেন না।
রুম থেকে বের হওয়ার মুখে মেয়েটির সঙ্গে আবার মুখোমুখি দেখা হয়। কিছু বলার আগেই বললো, দু’ চারটে ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছি, তাই সময় একেবারে...
মমিন আবার যেন হোঁচট খেলো। মানুষ কতোভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। নিরহংকারী ছোটখাটো মেয়েটি সত্যিই এক মায়াবী মানবী, বুক ভরা যার এতো ভালোবাসা, শেষপর্যন্ত তাকেও বিধবার বসন ধারণ করতে হয়। আর কোনো কথা মুখ থেকে বের না হলেও চেনা পথ ধরে মমিন হেঁটে যায়। হাঁটতে-হাঁটতে একসময় পেছন ফিরে দেখে মেয়েটি দাঁড়িয়ে ভাঙা প্যালেস্তারা ক্ষয়া বাড়িটার জীর্ণ রোয়াকে। মুখে ম্লান একচিলতে হাসি, হাসিটুকু বড়ই করুণ যেন। এতোই করুণ যে কাব্য করার কোনো ভাষা থাকে না, হয়তো ভাষা থাকলেও ভাষার শক্তি অবলীলায় হারিয়ে যায়।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
ব্র্যাক ব্যাংকের কর ফাঁকি, আদায়ে এনবিআরের অভিযান
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মুক্তাদির, সম্পাদক জাওহার
দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয়নি: ওবায়দুল কাদের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের টিকিটের মূল্য প্রকাশ, ২০০ টাকা থেকে শুরু
৭ মে পর্যন্ত বাড়লো হজ ভিসা আবেদনের সময়
শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা, মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন ভোলার জেলেরা
লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুন: এক বছরেও আদালতে চার্জশিট জমা দেয়নি পুলিশ
৫২ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- [email protected] বিজ্ঞাপন- [email protected]
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft