সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহৎ নলুয়া ও মইয়া হাওরের বেরীবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিগত দিনের মতো এবার ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বেরীবাঁধের সংস্কার কাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। পাউবো ও পিআইসির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে এবারও মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের কাজ করা হয়নি। বাঁধের সটিক উচ্চতা দেওয়া হয়নি। পুরাতন বাঁধ এর কাছে থেকে মাটি তুলে নতুন বাঁধ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে পুরাতন বাঁধের মাটি খুড়ে দায়সারাভাবে নতুন বাঁধ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাঁধ এ প্রাক্কলনের সার্বিক তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড সাটানো থাকার কথা থাকলেও কোথাও একটি সাইনবোর্ড ও চোখে পড়েনি।
জগন্নাথপুরের দায়িত্ব প্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কুমার শীলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে পিআইসির সঙ্গে আতাতের ফলে হাওরে সটিক উচ্চতার বেরীবাঁধ হয়নি। দায়সারাভাবে কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ও পিআইসির মধ্যে।
সরেজমিনে নলুয়া হাওর পরিদর্শনকালে দেখা যায়, হাওরের ৯ নম্বর বাঁধ প্রকল্পের ডুমাইখালী থেকে টংগর পর্যন্ত বাঁধের স্থানে পর্যাপ্ত মাটি পড়েনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮১০ মিটার এই বাঁধের জন্য ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল মিয়া।
১২,১৩,১৪ নম্বর প্রকল্পে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি বলে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। নলুয়ার হাওরের পশ্চিম প্রান্তের গাদিয়ালা থেকে বেতাউকা সুইচ গেট পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পের প্রায় ১৬শ মিটার কাজের জন্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ তিনটি প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল মিয়া। বিগত দিনের মতো এবারও একাই তিন প্রকল্পের ৬০ লাখ টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ওই প্রকল্পের পুরাতন বাঁধে নাম মাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। এদিকে হাল্কা বৃষ্টি হওয়াতে ৭ নং বাঁধে ৬টি জায়গায় ঝুকিপূর্ণ ফাটল দেখা দিয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ভূরাখালী গ্রামের অধিবাসী সিদ্দিক আহমদ বলেন, আমার গ্রামের আশপাশেই বেরীবাঁধের অবস্থান। পুরাতন বাঁধের কাছ থেকে মাটি খুঁড়ে নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। একটা সিন্ডিকেট প্রতি বছরই বাঁধ নিয়ে মৌসুমি বাণিজ্যে মেতে ওঠে। এবারও একই অবস্থা। পাউবোর সঙ্গে যোগসাজশে এবারও সরকারি টাকার লুটপাট চলছে। আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল মিয়া বিভিন্ন নামে এবার ও ৬০ লাখ টাকার তিনটি প্রকল্প ভাগিয়ে নিয়েছেন।
জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ৩৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৭ মার্চ পর্যন্ত ২য় দফা সময় বাড়ানো হলেও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাজ করা হয়নি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক।
হাওর বাচাও আন্দোলনের সভাপতি কলকলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাওরের বেরীবাঁধের জন্য সরকার ৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিলেও কাজ হয়েছে নিম্নমানের। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি বাঁধের উচ্চতা হয়নি। পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ করা হয়েছে দায়সারাভাবে।
তিনি বলেন, হাওরে অকাল বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম রয়েছে । দায়সারাভাবে নিম্নমানের বাঁধ নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি শীল জানান, হাওরের বেরীবাঁধের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান নলুয়া ও মই হাওরের ২২ কিলোমিটার বেরীবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের জন্য সরকার থেকে প্রায় ৫কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এখানে লুটপাটের অভিযোগ সটিক নয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন,বেরীবাঁধের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ মার্চ কাজ সম্পন্ন হয়। আমরা হাওরের বেরীবাধের রক্ষণা বেক্ষনে সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
উল্লেখ্য, জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহৎ নলুয়ার হাওরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ও মই হাওরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল রয়েছে। উপজেলায় ছোটবড় ১৩টি হাওর রয়েছে।
আজকালের খবর/বিএস