
মাদক ব্যবসায়ীকে তুলে এনে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম ফরিদ হোসেন ওরফে পাঞ্চু। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হাউজিং সোসাইটি অরুনাপল্লিতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। ফরিদ মাদকের ব্যবসা করতেন বলে জানান এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র এসে ফরিদ হোসেনকে ধরে মারধর করে নিয়ে যায়। তাকে মারধর করে রিকশায় ওঠানোর সময় তার স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করলেও তাকে ছাড়েনি। সোমবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী নূরে আলম সুইজারল্যান্ড এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসেন।
নিরাপত্তারক্ষী নূর আলম জানান, ‘ভোর চারটার দিকে নিরাপত্তা শাখা থেকে আমাকে জানানো হয় সুইজারল্যান্ড এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরেছে। সেখানে গেলে চারজন মিলে ফরিদকে আমার কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় তারা ফরিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইয়াবা এবং এক বোতল ফেন্সিডিলও দিয়ে দেয়। তাদের কাউকে আমি চিনি না। তবে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই মনে হয়েছে।’
ফরিদ হোসেনের স্ত্রী শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার স্বামী মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা তাকে মাদক ব্যবসার জন্য চাপ দিতো। গত সপ্তাহে শনিবার (৮ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র সাব্বির হোসেন আর মেহেদী হাসান জয় আমার স্বামীর (ফরিদ) মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল এবং তার কাছে যা টাকা ছিল সব নিয়ে গেছে। তখন আমার স্বামী আমাকে বলেছে মাদকের ব্যবসার জন্য তারা আমাকে জোরাজুরি করছে কিন্তু আমি করতে রাজি না। এজন্য তারা আমার স্বামীর মাথা ফাটায়।’
শিরিন আক্তার আরো বলেন, ‘রবিবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে মেরে তুলে নিয়ে যায়। আমি তাদের কাউকে চিনতে পারিনি। তবে আমাদের সন্দেহ সাব্বির আর জয় যেহেতু আগে মাথা ফাটিয়েছিল সুতরাং তারাই এই কাজ করেছে।’
এদিকে অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন, ‘গতকাল রফিক জব্বার হলের সাজ্জাদ হোসেন, ভাসানি হলের এহসান ইমাম নাঈম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৌহিদুল ইসলাম তাকীদ এবং মীর মশাররফ হলের আলরাজি সরকার আমাকে মারধর করে নিয়ে যায়। সেখানে সাব্বির হোসেন নাহিদ ও মেহেদী হাসান জয় ছিল না, কিন্তু যারা আমাকে উঠিয়ে এনেছে তারা সাব্বির আর জয়ের সঙ্গে পুরো সময় মোবাইলে যোগাযোগ করছিল। তারা আমাকে সুইজারল্যান্ড এলাকায় নিয়ে অনেক মারধর করে এবং আমার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। রাত দেড়টার দিকে গেরুয়ার ঢালে আমার বন্ধু আপেল মাহমুদ তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা দেয়। তখনও তারা আমাকে ছাড়েনি। ভোর চারটার দিকে তারা কিছু নকল ইয়াবা এবং একটি বোতলে পানি ভরে ফেন্সিডিল নামে চালিয়ে দিয়ে আমাকে নিরাপত্তা শাখার কাছে দিয়ে দেয়।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয় বলেন, ‘আমরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত না। রাতে যখন তাকে তুলে আনা হয়েছে তখন আমরা প্রীতিলতা হলে ছাত্রলীগের কর্মী সভায় ছিলাম।’
শাখা ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার বলেন, ‘আমি গতকাল রাতে খালার বাসায় ছিলাম। আজকেই ক্যাম্পাসে আসলাম। এ ব্যাপারে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন।’
এ ব্যাপারে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) জেফরুল হাসান চৌধুরি সজল বলেন, ‘ভোররাতে এই ঘটনা জানতে পারি। মওলানা ভাসানি হলের ৪৪ ব্যাচের নাঈম আমাকে ফোন দিয়ে জানালে একজন নিরাপত্তা রক্ষীকে সেখানে পাঠাই। পরে পুলিশকে জানালে তারা ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করে এবং তাকে নিয়ে যায়।’
এদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক নুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সবগুলো ইয়াবা মনে হয়নি, নকলও রয়েছে। ফেন্সিডিলের বোতলে শুধু পানি ছিল। তবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের এটা পরীক্ষা করতে হবে।’
আজকালের খবর/ওআর